ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ২৬ ডিসেম্বর ২০২৪

কক্সবাজারে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ, স্বাস্থ্যবিধির বালাই নেই কোথাও

শাহীন মাহমুদ রাসেল :: সারাদেশের মতো কক্সবাজারেও করোনা ভাইরাসের দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হয়ে গেছে। কিন্তু মহামারি এ ভাইরাস নিয়ে মানুষের মধ্যে নেই কোনো ভীতি-উদ্বেগ। সরকার ‘নো মাস্ক নো সার্ভিস’ ঘোষণা করেছে, স্বাস্থ্যবিধি মানা ও সামাজিক দূরত্ব রক্ষার প্রচারণা চালাচ্ছে। অথচ সেদিকে কারোরই ভ্রুক্ষেপ নেই। পরিবহন, হাট-বাজার, বিপণিবিতান, মার্কেট, রেষ্টুরেন্ট কোথাও মানুষ স্বাস্থ্যবিধি মানছে না।

মাস্ক পরতে মানুষকে বাধ্য করতে প্রশাসন ভ্রাম্যমাণ আদালতের মধ্যমে জরিমানা করলেও তবুও হুশ হচ্ছে না সাধারণ মানুষের। সম্প্রতি কক্সবাজারের বিভিন্ন এলাকা, বাস টার্মিনাল, হোটেল-মোটেল জোন, সমুদ্র সৈকত, শপিং মহল ও হাট-বাজার ঘুরে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।

জেলার বিভিন্ন মার্কেট ঘুরে দেখা যায়, কেউ স্বাস্থ্যবিধি মানছেন না। মুখে মাস্ক পরেন না অর্ধেক মানুষ। কেউ কেউ থুতনিতে মাস্ক পরেন। সড়কে বিপুল সংখ্যক ব্যক্তিগত গাড়ি, সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে। দাপিয়ে বেড়াচ্ছে রিকশা। কোথাও মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্ব। এছাড়াও শহরের অলিগলিতেও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো বালাই চোখে পড়েনি। দোকানে দোকানে ভিড় করছেন মানুষ।

শনিবার (২৬ ডিসেম্বর) বড় বাজারে দেখা যায় মানুষের ভিড়। হকার মার্কেট, সুপারমার্কেটে, সালাম মার্কেটে ও পান বাজার সড়কে প্রচন্ড ভিড়। কেউ সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। বাজারের ভেতরে মুদি দোকানগুলোতে দেখা যায় ক্রেতাদের ভিড়। ওই দোকানের বাইরে একটি সাদা কাগজে লেখা স্বাস্থ্যবিধি মেনে গোল চিহ্ন দেয়া স্থানে দাঁড়িয়ে পণ্য কিনুন। কিন্তু ক্রেতাদের কেউই তা মানছেন না। তারা গা ঘেষে দাঁড়িয়ে আছেন। দোকানে থাকা কর্মচারীর মুখে কোনো মাস্ক নেই। বাজারের প্রায় সব দোকানেই একই চিত্র। বাজারের চিত্র দেখে বোঝা মুশকিল যে কক্সবাজারে করোনাভাইরাস নামে ভয়াবহ কোনো সংক্রমণ ব্যাধি আছে। এখানে সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার কোনো দৃশ্যই দেখা যায়নি।

সরজমিন দেখা যায়, শুক্রবার সকাল থেকেই কক্সবাজারের কলাতলী বিচে কয়েক হাজার পর্যটক। সমুদ্র সৈকতে বেড়াতে আসা এসব পর্যটকের অনেকের মুখেই মাস্ক নেই। কারো কারো মাস্ক থাকলেও তা মুখের বদলে গলার দিকে নামানো। তাছাড়া একই পরিবার কিংবা বন্ধুদের নিয়ে বেড়াতে আসা পর্যটকরা দূরত্ব বজায় ছাড়াই বিচের একপ্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। যাতে করোনাভাইরসা সংক্রমণের ঝুঁকি বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে অনেকাংশে। ভাইরাস সংক্রমণ রোধে সংশ্লিষ্টদের সচেতনতামূলক নির্দেশনা থাকলেও আদতে কেউ মানছেন না।

বিমানবন্দরের অভ্যন্তরীণ টার্মিনাল ঘুরে দেখা গেছে, প্রত্যেক যাত্রী মুখে মাস্ক, হাতে গ্লাভস ও স্যানিটাইজার ব্যবহার করলেও সামাজিক দূরত্ব (ন্যূনতম তিন ফুট দূরত্বে অবস্থান) মানা হচ্ছে না। প্রবেশপথ থেকে শুরু করে টার্মিনালের ভেতর এমনকি বিমানে ওঠার সময়ও সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার নির্দেশনা প্রতিপালিত হচ্ছে না।

বাস টার্মিনালে গিয়ে দেখা যায়, কক্সবাজার থেকে অন্য জেলা উপজেলাগুলোর উদ্দেশ্যে ছেড়ে যাওয়া বাসগুলোতে স্বাস্থ্য বিধি মানার তেমন কোনো তোড়জোড় নেই। যাত্রীদের তোলার সময় কোনোধরনের হ্যান্ড স্যানিটাইজার দেয়া হচ্ছে না। মানা হচ্ছে না সামাজিক দূরত্বও।

জেলা প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, সম্প্রতি জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে কক্সবাজার জেলার উপজেলাসমূহ এবং শহরের জনবহুল স্থানে করোনাভাইরাসের দ্বিতীয় ওয়েভ মোকাবেলায় বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধান নিশ্চিত করার জন্য জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম, বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।

এছাড়া অন্যান্য উপজেলা এবং শহরে মাস্ক ব্যবহারে উৎসাহিত করার জন্য সচেতনতা বৃদ্ধি ও মাইকিং করা হয়। জেলা প্রশাসনের উদ্দ্যোগে জেলায় ১০ লাখ মাস্ক বিনামূল্যে বিতরণ করার কথা রয়েছে। এছাড়াও শাস্তিমূলক ব্যবস্থা হিসেবে মোবাইল কোর্টে শতাধিক লোকজনকে জরিমানা করা হয়েছে। জনসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে মোবাইল কোর্টের অভিযান অব্যাহত থাকবে।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক)  মোহাম্মদ মাসুদুর রহমান মোল্লা বলেন, করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে ঘরের বাইরে মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক, আর তা নিশ্চিত করতে সচেতনা বৃদ্ধি করা হচ্ছে। তিনি আরোও বলেন, প্রতিটি উপজেলায় ফ্রি মাস্ক দেওয়া হচ্ছে। এরপরও যদি কেউ স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলেন, তবে তিনি নিজেই ঝুঁকিতে পড়বেন।

পাঠকের মতামত: